আগামী ক’দিনের মধ্যেই দেশে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদ ঘিরে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে সর্বত্র। এ সময়টিতে রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা সাধারণত নিজ নিজ এলাকা বা পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের সময় কাটান। তবে জামায়াতে ইসলামীর ক্ষেত্রে এবারের চিত্রটি কিছুটা ভিন্ন।
বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর একাধিক শীর্ষ নেতা কারাবন্দি, কেউ আবার পলাতক, আবার কেউ কেউ রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তার মধ্যেও আছেন নিরাপত্তাজনিত কারণে। ফলে কে কোথায় ঈদ করবেন—সেটি এবার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মাঝেও কৌতূহলের বিষয় হয়ে উঠেছে।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মাকসুদুর রহমান বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। জানা গেছে, তিনি রাজধানীর মিরপুর এলাকায় নিজ বাসাতেই ঈদের নামাজ আদায় করবেন এবং সেখানেই দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে সাক্ষাতেরও সম্ভাবনা রয়েছে।
দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বর্তমানে কারাবন্দি অবস্থায় আছেন। তিনি কাশিমপুর কারাগারে ঈদ করবেন বলে কারা সূত্রে জানা গেছে। কারাগারে অন্যান্য বন্দিদের সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় এবং নির্ধারিত মেন্যু অনুযায়ী ঈদের খাবার গ্রহণ করবেন তিনি।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের আরেক সদস্য, প্রাক্তন সংসদ সদস্য দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পুত্র রাফিকুল ইসলাম মাদানী বর্তমানে লুকিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে। নিরাপত্তা এবং গ্রেফতারের শঙ্কায় তিনি প্রকাশ্যে না এলেও ধারণা করা হচ্ছে, তিনি ঢাকার বাইরের কোনো গোপন স্থানে ঈদ পালন করবেন।
জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ আরও কয়েকজন শীর্ষ নেতা ইতোমধ্যে যুদ্ধাপরাধ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে ফাঁসির মাধ্যমে মৃত্যুবরণ করেছেন। ফলে দলের শীর্ষ নেতৃত্বে এক ধরনের শূন্যতা এবং বিভক্তির চিত্রও স্পষ্ট।
তবে দলটির তৃণমূল পর্যায়ে ঈদ উপলক্ষে কিছু সাংগঠনিক বৈঠক ও দোয়া মাহফিলের আয়োজনের কথা জানা গেছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারির কারণে এসব আয়োজন খুবই সীমিত পরিসরে হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াতের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঈদ উদযাপন রাজনৈতিক চেয়ে অনেকটা ব্যক্তিগত এবং আত্মগোপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। একইসঙ্গে দলের নেতারা চেষ্টা করছেন জনসম্মুখে না এসে নিজেদের অবস্থান গোপন রেখে ঈদ পালন করতে।
সবমিলিয়ে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের এবারের ঈদ একদিকে যেমন গোপনীয়তা ও নিরাপত্তাজনিত চিন্তার মাঝে কাটবে, অন্যদিকে রাজনৈতিকভাবে দলটির বর্তমান দুরবস্থাও স্পষ্টভাবে ফুটে উঠছে এই প্রেক্ষাপটে।