রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বাসগুলোতে যাত্রীদের ওপর বাড়তি ভাড়া আদায়ের ঘটনা সম্প্রতি বেড়ে গেছে। যাত্রীদের অভিযোগ, নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা দাবির মাধ্যমে তাদের ওপর অতিরিক্ত বোঝা চাপানো হচ্ছে। এ নিয়ে ব্যাপক নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে এ অবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা এসেছে।
পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যেকোনো পরিবহন প্রতিষ্ঠানের বাসে নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাত্রীদের জানানো হয়েছে, বাড়তি ভাড়া নেওয়া হলে তাৎক্ষণিকভাবে কর্তৃপক্ষের হটলাইন বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়া সহ চালক বা পরিবহন মালিকের বিরুদ্ধে জরিমানা ও লাইসেন্স বাতিলের মতো শাস্তি দিতে পারে সরকার।
পরিবহন মন্ত্রী এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, "যাত্রীদের সুবিধা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। বাস চলাচলে অনিয়ম দমন করতেই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কেউ যদি বাসে বাড়তি ভাড়া নেয়, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।"
গত কয়েক মাসে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর যাত্রী ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও, বেশ কিছু বাস মালিক অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে ঢাকার বিভিন্ন রুটে এ সমস্যা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো এই ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান নিয়েছে এবং অযথা অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার বিরোধিতা করেছে।
যাত্রীদের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। একজন যাত্রী বলেন, "আমরা চাই বাসগুলো সুষ্ঠুভাবে চলুক, কিন্তু অতিরিক্ত টাকা নেওয়া ঠিক না। আমরা চাই নির্ধারিত ভাড়া অনুসারে চলবে।" অন্যদিকে, কিছু চালক দাবি করেছেন, বাড়তি ভাড়া না নিলে তাদের খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়ে, বিশেষ করে জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায়।
সরকার ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছে এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিশেষ মনিটরিং টিম গঠন করে বাস ভাড়ার উপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে যাত্রীদের কল সেন্টার ও মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে বাড়তি ভাড়া নেয়া চালক বা পরিবহন মালিকের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাস ভাড়া নিয়ন্ত্রণ ও যাত্রী সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আরও প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। যেমন, বাস ভাড়া অটোমেটিকাল রেজিস্টার ও ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু করলে অশালীন ভাড়া নেওয়া অনেকাংশে কমে আসবে। পাশাপাশি যাত্রীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করাও জরুরি।
এই পদক্ষেপের ফলে আশা করা হচ্ছে, বাস ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তি কমবে এবং বাস সেবার মান উন্নত হবে। পরিবহন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, যাত্রীদের সুবিধার জন্য যে কোনও ধরনের অন্যায় ও বাড়তি ভাড়া নেওয়ার ঘটনা যেন আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে তারা কঠোর নজরদারি চালিয়ে যাবে।
সরকারের এই উদ্যোগে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। বাসে নির্ধারিত ভাড়া নেয়ার নিয়মকানুন মেনে চলার ফলে সবার জন্য সুষ্ঠু পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।