কুড়িগ্রামে মাত্র ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেয়েছেন ২৯ জন তরুণ-তরুণী। স্বপ্ন ছিল দেশের সেবা করবেন, আর সেই স্বপ্ন পূরণ হলো কোনোরকম ঘুষ বা সুপারিশ ছাড়াই। এই ঘটনা নতুন করে দেশের নিয়োগ ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে আশাবাদী করেছে সাধারণ মানুষকে।
বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এবার কুড়িগ্রামে যে নজির স্থাপন হয়েছে, তা অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। নিয়োগপ্রাপ্তদের একজনও কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির সুপারিশ, ঘুষ বা অবৈধ পন্থা গ্রহণ করেননি। বরং ১২০ টাকা জমা দিয়ে সম্পূর্ণ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে তারা পুলিশে চাকরি পেয়েছেন।
নিয়োগ প্রক্রিয়া
চলতি বছর পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশনায় জেলা পর্যায়ে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়। কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের আয়োজনে এই নিয়োগ পরীক্ষা চলে নির্ধারিত নিয়ম মেনে।
আবেদন করতে একজন প্রার্থীকে দিতে হয়েছে মাত্র ১২০ টাকা — যা মূলত আবেদন ফি ও চিকিৎসা পরীক্ষার খরচ। এরপর যথাক্রমে প্রাথমিক শারীরিক যোগ্যতা যাচাই, দৌড়, উচ্চতা ও বুকের মাপ পরিমাপ, লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভা — এই ধাপগুলো পেরিয়ে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন প্রার্থীরা।
জেলা পুলিশ সুপার মো. আল আসাদ জানান, “আমরা স্বচ্ছতা ও মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ নিশ্চিত করেছি। একটি টাকাও ঘুষ ছাড়াই এই নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। কুড়িগ্রামের মানুষ আমাদের বিশ্বাস করেছে, আমরাও সেই বিশ্বাস রাখার চেষ্টা করেছি।”
প্রার্থীদের অভিমত
চাকরি পাওয়া তরুণদের চোখে মুখে ছিল আনন্দ ও গর্ব। ভূরুঙ্গামারীর আমিনা খাতুন বলেন, “আমার পরিবার গরিব। আগে ভাবতাম পুলিশে চাকরি পেতে হলে লাখ টাকা ঘুষ লাগে। এখন নিজ চোখে দেখলাম, শুধু যোগ্য হলেই যথেষ্ট। ১২০ টাকা দিয়ে আমি আজ সরকারি চাকরিজীবী।”
একইভাবে চাকরি পাওয়া নাগেশ্বরীর ফারুক হোসেন বলেন, “আমি দৌড়, লিখিত ও ভাইভায় ভালো করেছি। কোন প্রভাবশালীর দরকার হয়নি। আমার মা বিশ্বাস করতেই পারছে না — ছেলেটা একাই চাকরি পেল!”
এলাকার মানুষের প্রতিক্রিয়া
এ ঘটনায় কুড়িগ্রাম জুড়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক আনন্দ ও বিস্ময়ের ছাপ দেখা গেছে। অনেকেই বলছেন, এই নিয়োগ প্রক্রিয়া যদি সারাদেশে অনুসরণ করা হয়, তাহলে ঘুষ-দুর্নীতি অনেকটাই বন্ধ হবে।
স্থানীয় একজন শিক্ষক বলেন, “আমরা ছাত্রদের বলি পড়াশোনার মাধ্যমে জীবনে সফল হও। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। এখন এই নিয়োগে আবার আশাবাদী হয়েছি। আমাদের ছেলেমেয়েরা শুধু মেধা দিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে।”
স্বচ্ছ নিয়োগের দৃষ্টান্ত
সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায় থেকে পুলিশ নিয়োগে স্বচ্ছতা বজায় রাখার কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও এই বিষয়ে কঠোর নজরদারি ছিল বলে জানা যায়। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করেছে যেন কোনও প্রকার অনিয়ম না হয়।
এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রার্থীদের শারীরিক, মানসিক ও নৈতিক যোগ্যতা যাচাই করা হয়। চিকিৎসা পরীক্ষায় ত্রুটিপূর্ণ প্রার্থীদের বাদ দেওয়া হয় এবং লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় সবচেয়ে ভালো ফল করা প্রার্থীদেরকেই চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়।
সামাজিক বার্তা
এ ঘটনাটি শুধু ২৯ জনের চাকরি পাওয়ার গল্প নয়, বরং এটা এক সামাজিক বার্তা — “যোগ্যতার জয় হবেই, দুর্নীতি ঠেকানো সম্ভব।” এমন নজির প্রতিষ্ঠা হলে ভবিষ্যতে প্রার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়বে, আর ঘুষের চক্র ভেঙে যাবে।
ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
জনগণের একটাই চাওয়া — এই স্বচ্ছতা যেন কেবল কুড়িগ্রামে সীমাবদ্ধ না থাকে। দেশের প্রতিটি জেলা, প্রতিটি নিয়োগে যেন এমনই নিয়ম-নীতি ও সৎ উদ্যোগ দেখা যায়।
দেশের তরুণ সমাজ এখনো যদি দেখে যোগ্যতাই যথেষ্ট, তবে তারা সাহস করে এগিয়ে আসবে। আর পুলিশ বাহিনীর মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় যদি মেধাবী, সৎ, উদ্যমী তরুণ-তরুণীরা প্রবেশ করে, তাহলে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাও হবে আরও শক্তিশালী ও জনবান্ধব।