রিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক এমপি মমতাজ

0


 আদালতের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য ও জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমকে। শনিবার (১৮ মে) দুপুরে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তাকে হাজির করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার হওয়ার পর মমতাজকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। রিমান্ড শেষে আজ তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়।


কী কারণে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল?

মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাত ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলার এজাহার অনুযায়ী, তিনি একটি এনজিওর নামে সরকারের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে সেই অর্থ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছেন। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে সরকারি প্রকল্পে প্রভাব খাটিয়ে আত্মীয়স্বজনকে অবৈধ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।


দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি তদন্তে এসব তথ্য উঠে আসে। দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, মমতাজ বেগম তার সাংসদ থাকা অবস্থায় বেশ কয়েকটি প্রকল্পে প্রভাব খাটিয়েছেন এবং ব্যক্তিগত স্বার্থে সরকারি অর্থ ব্যবহার করেছেন।


আদালতে কী বলা হয়?

আদালতে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, মমতাজ বেগমের কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে আরও তথ্য জানা গেছে, যা তদন্তে সহায়ক হবে। তবে মামলাটি আরও গভীর তদন্তের প্রয়োজন এবং প্রমাণ নষ্ট বা সাক্ষীদের প্রভাবিত করার আশঙ্কা থাকায় তাকে কারাগারে পাঠানো জরুরি।


আদালতের বিচারক বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। তদন্ত চলমান থাকায় এবং মামলাটি সংবেদনশীল হওয়ায় তাকে এখনই জামিন দেওয়া সম্ভব নয়।”


মমতাজ বেগমের পক্ষে কী বলা হয়?

সাবেক সাংসদের আইনজীবী আদালতে বলেন, “মমতাজ বেগম একজন সম্মানিত নাগরিক, একজন খ্যাতিমান শিল্পী এবং দীর্ঘদিনের জনপ্রতিনিধি। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”


আইনজীবী জামিনের আবেদন করলেও আদালত তা নামঞ্জুর করে। তবে আইনজীবী জানান, উচ্চ আদালতে আপিল করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।


রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

মমতাজ বেগম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার গ্রেপ্তার ও রিমান্ড নিয়ে দলীয় পর্যায়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। দলের একাংশ বলছে, “আইন তার নিজস্ব গতিতে চলুক,” অপরদিকে অন্য একটি অংশ বলছে, “এটি একটি পরিকল্পিত অপচেষ্টা, যাতে জনপ্রিয় একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও রাজনীতিককে কালিমালিপ্ত করা যায়।”


বিরোধীদল এই ঘটনাকে সরকারের ‘অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফল’ বলে উল্লেখ করেছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, “মমতাজের মতো একজন শিল্পী ও সংসদ সদস্যকে অপমানিত করা হয়েছে। এটি দেশের সংস্কৃতি ও রাজনীতির জন্য দুঃখজনক।”


সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া

মমতাজ বেগম শুধু একজন রাজনীতিবিদ নন, বরং একজন গানের তারকা, যার অসংখ্য ভক্ত আছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তার এই গ্রেপ্তার ও কারাবন্দি হওয়ার খবরে সামাজিক মাধ্যমে ভক্তদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ বলছেন, “যদি তিনি দোষী হন, বিচার হোক। তবে প্রমাণ ছাড়া একজন শিল্পীকে দোষী করা ঠিক নয়।” আবার অনেকে বলছেন, “সবার জন্যই আইন সমান হওয়া উচিত। তিনি শিল্পী হোন বা সাংসদ, অপরাধ করলে বিচার হবেই।”


ভবিষ্যৎ কী?

বর্তমানে মমতাজ বেগম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। দুদক ও পুলিশের পক্ষ থেকে আরও তদন্ত চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। মামলাটি বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন থাকবে বলে জানা গেছে।


অন্যদিকে, তার আইনজীবী উচ্চ আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করবেন এবং বলেন, “আমরা আশা করি ন্যায়বিচার পাব। মমতাজ বেগম নির্দোষ—এটি আমরা প্রমাণ করব।”


এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও আলোচনা শুরু হয়েছে, জনপ্রিয় তারকাদের রাজনীতিতে আসার বিষয়টি কতটা যৌক্তিক, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top