গণমানুষের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ও সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম সম্প্রতি আদালতে এক বিব্রতকর ঘটনার সম্মুখীন হন। তার বিরুদ্ধে মঞ্চে গান গাওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা মামলার শুনানিতে, পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্ন তোলায় আদালতকক্ষে এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে ঢাকার একটি দায়রা আদালতে, যেখানে মমতাজ বেগম হাজির ছিলেন একটি প্রতারণা মামলার হাজিরা দিতে। মামলাটি করা হয়েছিল এক আয়োজকের পক্ষ থেকে, যিনি অভিযোগ করেন যে, মমতাজ চুক্তি অনুযায়ী মঞ্চে গান না গেয়ে অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে যান। তবে মমতাজ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি সকল শর্ত মান্য করেই অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন।
কিন্তু মূল আলোচনায় আসে এক পর্যায়ে, যখন মামলার শুনানির সময় পাবলিক প্রসিকিউটর হঠাৎ করে ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে চলে যান। আদালতের মাঝেই তিনি মমতাজকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করেন, “বলেন তো, আপনার স্বামী কয়জন?”। এই প্রশ্ন শুনে আদালতকক্ষে উপস্থিত সকলেই বিস্মিত হয়ে যান।
মমতাজ বেগম সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করে বলেন, “এই প্রশ্নের কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই। আপনি কেন আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্ন করছেন?” তিনি আরও বলেন, “আমি একজন সংসদ সদস্য ছিলাম, একজন সম্মানিত শিল্পী। এই ধরনের প্রশ্ন আমাকে হেয় করার উদ্দেশ্যে ছাড়া আর কিছু নয়।”
আদালতের বিচারকও তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ করেন এবং পিপিকে সংযত থাকতে বলেন। বিচারক পিপিকে মনে করিয়ে দেন যে, মামলার মূল বিষয়বস্তু প্রতারণা অভিযোগ সংক্রান্ত, ব্যক্তিগত জীবনের কোনো প্রশ্ন এখানে প্রাসঙ্গিক নয়।
ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই মন্তব্য করেন, একজন নারী শিল্পী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে এমন আচরণ লজ্জাজনক ও দুঃখজনক। নেটিজেনদের একটি বড় অংশ মনে করেন, মমতাজকে প্রশ্নটি করে অপমান করার চেষ্টা করা হয়েছে।
এই ঘটনায় দেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও নারী অধিকার সংগঠন নিন্দা জানিয়েছে। নারীপক্ষ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদসহ একাধিক সংগঠন এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এ ধরনের প্রশ্ন নারীর প্রতি অবমাননার সামিল এবং আদালতের পরিবেশে তা আরও বেশি অপমানজনক।”
অন্যদিকে, পিপি তার বক্তব্যে বলেন, তিনি আসলে প্রশ্নটি করেছেন কারণ মামলায় কিছু তথ্যের অসংগতি ছিল এবং তিনি তা যাচাই করতে চেয়েছিলেন। তবে তিনি যদি কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকেন, সে জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
মমতাজ বেগম বলেন, “আমি দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। আমি বিশ্বাস করি, ন্যায়বিচার পাব। কিন্তু একজন নারী হিসেবে এভাবে জনসমক্ষে হেনস্তা হওয়াটা খুব কষ্টদায়ক।”
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আদালতের ভেতর ও বাইরে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেক আইনজীবী ও বিশিষ্ট নাগরিকরা মত দিয়েছেন, বিচার প্রক্রিয়ায় শালীনতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার কারও নেই, যদি না তা মামলার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, আদালত মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ঘোষণা করেছেন এবং উভয় পক্ষকে যথাযথ প্রমাণাদি উপস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণ হলো, বিচার ব্যবস্থায় পেশাদারিত্ব ও শালীন আচরণ বজায় রাখা কতটা জরুরি। একজন পরিচিত মুখ হলেও, মমতাজের মতো কাউকে যদি এভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয়, তাহলে সাধারণ নারীরা কতটা নিরাপদ — সেই প্রশ্নও উঠে এসেছে সামাজিক পরিসরে।