ঢাকা, ১৮ মে ২০২৫: রাজধানীর অন্যতম সংবেদনশীল এলাকা ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের প্রবেশপথ ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ ও গণজমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নিরাপত্তা হুমকির প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন এলাকায় কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মসূচি ও অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা আসে, যা সামরিক স্থাপনার নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কড়া অবস্থান নিয়েছে এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার চারদিকে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
ডিএমপির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক এলাকা। এখানে সামরিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তাই জননিরাপত্তা ও সামরিক স্থাপনার নিরাপত্তা বিবেচনায় ক্যান্টনমেন্ট ও সংলগ্ন এলাকায় যে কোনো ধরনের সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ, মিছিল এবং উচ্চ শব্দের মাইক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হলো। এ নির্দেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এছাড়া ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় প্রবেশের সময় সাধারণ জনগণের জন্য নতুন কিছু নিরাপত্তা বিধি আরোপ করা হয়েছে। এখন থেকে ওই এলাকায় প্রবেশের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র বহন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা যানবাহনকে তল্লাশির আওতায় আনা হচ্ছে। বিশেষ করে ক্যান্টনমেন্টের আশপাশের এলাকায় বসবাসকারী বাসিন্দাদের গতিবিধি নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত মূলত সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং কয়েকটি গোপন সভা-সমাবেশের খবরে প্রশাসনের সজাগতারই অংশ। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো গুজব ও উসকানিমূলক প্রচার সামরিক এলাকাকে লক্ষ্য করে যেসব পরিকল্পনার ইঙ্গিত দিয়েছে, সেটিও এই সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদা পারভীন বলেন, “সংবিধানে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার থাকলেও নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে সরকার বা নিরাপত্তা বাহিনী নির্দিষ্ট এলাকায় নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। ক্যান্টনমেন্ট এলাকা এর আওতাভুক্ত হতে পারে, তবে তা যেন অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত না হয়, সে বিষয়েও সতর্ক থাকা প্রয়োজন।”
এদিকে, কিছু রাজনৈতিক দল এই নিষেধাজ্ঞাকে সরকারের পক্ষ থেকে গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে। একটি প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতা বলেন, “আমরা সংবিধান অনুযায়ী শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশ করার অধিকার রাখি। ক্যান্টনমেন্ট এলাকার আশপাশেও জনগণের বসবাস রয়েছে। তাদেরও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। সুতরাং সবকিছু নিষিদ্ধ করা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিপন্থী।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেনাবাহিনীর জনসংযোগ দপ্তর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় জানায়, “এটি একটি সাধারণ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। সামরিক স্থাপনার নিরাপত্তা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। এই সিদ্ধান্ত কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়।”
বর্তমানে ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা টহল জোরদার করেছে। বিশেষ করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন, মিরপুর DOHS, ইপিলিয়ন মোড়, ও তেজগাঁও-আর্মি স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এই নির্দেশনার মেয়াদ কতদিন থাকবে তা স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাধারণ নাগরিকদের একাংশ এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। একজন বাসিন্দা বলেন, “এ এলাকায় নিরাপত্তা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনিশ্চিত, তাই এই ব্যবস্থা আমাদের নিরাপদ রাখবে।”
তবে নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো বলছে, “যে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে নাগরিকদের মতামত এবং সাংবিধানিক অধিকার বিবেচনা করা উচিত। একটি সামরিক এলাকা হলেও, সেখানে বসবাসরত জনগণেরও মতপ্রকাশের অধিকার আছে।”