মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসীদের জন্য সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে, যার ফলে অনেক বাংলাদেশি নাগরিক স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরে আসার সুযোগ পাচ্ছেন। মালয়েশিয়া সরকারের এ উদ্যোগকে মানবিক ও বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা অবৈধ অভিবাসন সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সাধারণ ক্ষমার আওতায় থাকা অভিবাসীরা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে স্বেচ্ছায় মালয়েশিয়া ত্যাগ করলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। এমনকি ভবিষ্যতে বৈধ কাগজপত্র নিয়ে মালয়েশিয়ায় ফিরে যাওয়ার পথও উন্মুক্ত থাকবে। মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশন এবং দেশটির অভিবাসন বিভাগ যৌথভাবে এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে কাজ করছে।
হাইকমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সাধারণ ক্ষমা কর্মসূচির আওতায় অবৈধ অবস্থানকারীরা সহজে দেশে ফেরার সুযোগ পাবেন। কোনো ধরনের জরিমানা বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ছাড়াই তারা নিজ দেশে ফিরতে পারবেন। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা এই সুযোগ গ্রহণ করবেন না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানো হবে এবং আটক হওয়ার পর তাদের ডিপোর্টেশন প্রক্রিয়াও হবে কঠিন ও দীর্ঘমেয়াদী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মালয়েশিয়ায় প্রায় তিন লাখেরও বেশি বাংলাদেশি রয়েছেন, যাদের একটি বড় অংশ বৈধতার বাইরে আছেন। নানা কারণে অনেকেই বৈধতার কাগজপত্র নবায়ন করতে পারেননি কিংবা প্রতারণার শিকার হয়ে অবৈধ হয়ে পড়েছেন। এদের জন্য এই সাধারণ ক্ষমা এক সুবর্ণ সুযোগ, যা দিয়ে তারা নিজ দেশে নিরাপদে ফিরে যেতে পারবেন এবং ভবিষ্যতে আবার বৈধ পথে মালয়েশিয়ায় কাজের সুযোগ খুঁজে নিতে পারবেন।
বাংলাদেশ সরকারও এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করছে। বিমান ভাড়া, জরুরি ট্রাভেল পাস এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে হাইকমিশন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। অভিবাসী কল্যাণ ডেস্ক এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ও দেশে ফিরে আসা কর্মীদের পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে।
এই সাধারণ ক্ষমা কর্মসূচি অভিবাসন নীতির একটি ইতিবাচক দিক নির্দেশ করে। এটি একদিকে যেমন অবৈধ অভিবাসীদের মানবিক বিবেচনায় স্বস্তির সুযোগ দিচ্ছে, অন্যদিকে বৈধ অভিবাসনের ক্ষেত্রও সুগম করছে। অবৈধ অভিবাসনের কারণে দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল, যা কমে আসবে বলেও অনেকে আশা করছেন।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে যথাযথ তথ্যপ্রবাহ, সচেতনতা ও সরকারি সমন্বয় খুব জরুরি। অন্যথায়, অনেকেই হয়তো সময়সীমা পেরিয়ে ফেলবে এবং কঠিন পরিস্থিতিতে পড়বে। তাই এখনই প্রয়োজন ব্যাপক প্রচার এবং দূতাবাস ও বাংলাদেশ সরকারের কার্যকর সমন্বয়।