ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণ নিয়ে নতুন করে আইনি জটিলতা দেখা দিয়েছে। এবার তার শপথ ঠেকাতে নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছেন পূর্বের রিটকারী ও আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ এক আইনজীবী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাঈদ খোকনের কাছে হেরে যান ইশরাক হোসেন। কিন্তু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সময় তার বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এক রিটকারী আইনজীবী। তিনি দাবি করেন, নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় ইশরাক ব্রিটিশ নাগরিক ছিলেন, যা গোপন রাখা হয়েছিল। তখন হাইকোর্ট এই রিট খারিজ করে দিলেও বিষয়টি নিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলে তুমুল আলোচনা হয়।
সম্প্রতি ইশরাক হোসেন ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করতে প্রস্তুত এবং ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে শপথ গ্রহণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়া শুরুর পরই পুরোনো রিটকারী নতুন করে হাইকোর্টে আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
আইনি সূত্র জানায়, নতুন আবেদনে দাবি করা হবে যে, যেহেতু ইশরাক হোসেন নির্বাচনের সময় বিদেশি নাগরিকত্বের বিষয়টি গোপন রেখেছেন, সেহেতু তার প্রার্থিতা বাতিল হওয়া উচিত ছিল, ফলে শপথ গ্রহণের অধিকার তার নেই। পাশাপাশি এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হবে।
রিটকারীর পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, “যে প্রার্থী মনোনয়ন দাখিলের সময় সংবিধান ও আইনের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত লঙ্ঘন করেন, তিনি কিভাবে এখন এসে মেয়রের শপথ নেন? এ বিষয়টি শুধু আইনের লঙ্ঘন নয়, এটি দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার জন্যও হুমকি।”
অন্যদিকে বিএনপি ও ইশরাক হোসেনের ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, এটি একটি রাজনৈতিক চক্রান্ত। তারা বলছেন, “সরকার শঙ্কিত ইশরাক জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এবং ভবিষ্যতের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাই বিভিন্নভাবে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে।”
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, ইশরাকের শপথ ঠেকাতে নতুন রিট করা হলেও আদালত এই বিষয়ে শুনানি শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। তবে বিষয়টি রাজনৈতিক ও আইনি দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
ইশরাক নিজেও বলেছেন, “আমি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি, শপথ নেওয়া আমার সাংবিধানিক অধিকার। কেউ যদি আবার বাধা দেয়, তাহলে সেটি শুধু আমার না, জনগণের রায়ের বিরুদ্ধেই যাবে।”
সবমিলিয়ে, ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণ ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা ও আইনি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দেশবাসী এখন নজর রাখছে আদালতের ওপর—ইশরাক কি আদৌ শপথ নিতে পারবেন, নাকি আবারো বাধার সম্মুখীন হবেন?