গাজা উপত্যকায় চলমান সামরিক অভিযানের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রমাগত চাপে পড়ছে ইসরাইল। সম্প্রতি রাফাহতে ইসরাইলি অভিযানে শতাধিক ফিলিস্তিনি নাগরিকের মৃত্যু এবং মানবিক সহায়তা অবরুদ্ধ হওয়ার ঘটনা বিশ্বজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর আগ্রাসী অবস্থান এখন অনেককেই ভাবিয়ে তুলছে—নিজেই কি নিজের কবর খুঁড়ছেন নেতানিয়াহু?
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্ররা প্রকাশ্যে উদ্বেগ জানালেও, ইসরাইল এখনো হামলা অব্যাহত রেখেছে। জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন গাজায় ইসরাইলি কর্মকাণ্ডকে যুদ্ধাপরাধ বলেই অভিহিত করছে। এমনকি ইসরাইলের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও প্রথমবারের মতো সামরিক সহযোগিতা পুনর্বিবেচনার হুমকি দিয়েছে। মার্কিন প্রশাসন সম্প্রতি একটি অস্ত্র চালান আটকে দিয়েছে এবং রাফাহ অভিযানের কারণে তাদের উদ্বেগের কথা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে।
অন্যদিকে, ইসরাইলের অভ্যন্তরেও নেতানিয়াহুবিরোধী আন্দোলন জোরালো হচ্ছে। যুদ্ধের নামে দীর্ঘায়িত সংঘর্ষে অসংখ্য ইসরাইলি সেনা প্রাণ হারাচ্ছে, আর সাধারণ নাগরিকেরা শঙ্কিত ভবিষ্যত নিয়ে বিক্ষুব্ধ। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং অপশাসনের অভিযোগেও জনমনে ক্ষোভ জমেছে। এমন পরিস্থিতিতে তিনি নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষা করতে যুদ্ধকে ব্যবহার করছেন বলেও মত বিশ্লেষকদের।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধ জয় নয়, বরং যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এখন নেতানিয়াহুর টিকে থাকার কৌশল। তবে এই কৌশল উল্টো ফলও দিতে পারে। আন্তর্জাতিক আদালতে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ, পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন হারানো এবং অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ—সব মিলিয়ে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ভবিষ্যত এখন ঘোর অনিশ্চয়তার মুখে।
বিশ্বব্যাপী ইসরাইলবিরোধী মনোভাব যেভাবে বাড়ছে, তাতে করে একসময়ের শক্ত অবস্থানের নেতানিয়াহু ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। রাজনৈতিক কৌশলে নিজের শক্তি ধরে রাখতে গিয়ে আজ তিনিই হয়ে উঠেছেন ইসরাইলের ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।
নজিরবিহীন এই চাপ এবং ক্রমাগত আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে নেতানিয়াহুর সামনে এখন হয় যুদ্ধ থামানোর সাহস দেখানো, নয়তো ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায়ে নিজের নাম লেখা—নিজেই নিজের কবর খুঁড়ে।