ঢাকা: ভয়াবহ একটি দুর্ঘটনা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেল বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের সময় বিমানের একটি চাকা খুলে পড়ে যায়। তবে পাইলটের দক্ষতায় এবং তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে বিমানটি নিরাপদে শাহজালালে অবতরণ করতে সক্ষম হয়। এতে যাত্রীরা বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান।
সূত্র মতে, শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে সৈয়দপুরগামী বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট রানওয়ে থেকে উড্ডয়ন করার কিছু সময় পরই বিমানের ডান দিকের একটি ল্যান্ডিং গিয়ারের চাকা খুলে নিচে পড়ে যায়। বিমানটি তখন প্রায় ২০০০ ফুট উচ্চতায় ওঠে যাচ্ছিল। উড্ডয়নের সঙ্গে সঙ্গেই যান্ত্রিক গোলযোগের ইঙ্গিত পান ককপিটে থাকা পাইলট। বিষয়টি তৎক্ষণাৎ বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারকে জানানো হয় এবং জরুরি অবতরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
চাকা খুলে পড়ার বিষয়টি গ্রাউন্ড স্টাফরা রানওয়ের পাশে পড়ে থাকা চাকা দেখে নিশ্চিত হন। তারা সাথে সাথে কন্ট্রোল টাওয়ারে জানালে জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়। শাহজালাল বিমানবন্দরে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স এবং উদ্ধারকারী দল প্রস্তুত রাখা হয়। প্রায় ২৫ মিনিট আকাশে চক্কর কাটার পর পাইলট অত্যন্ত সতর্কভাবে বিমানটিকে পুনরায় অবতরণ করান।
বিমানটিতে প্রায় ৭০ জন যাত্রী ছিলেন। তাদের কারো গুরুতর ক্ষতি হয়নি। অবতরণের পর বিমানের যান্ত্রিক অবস্থা পরীক্ষা করার জন্য বিমানটিকে হ্যাঙ্গারে নিয়ে যাওয়া হয়। যাত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ আতঙ্কিত হয়ে পড়লেও পরে সবাই নিরাপদে ছিলেন জেনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।
বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কীভাবে উড্ডয়নের সময় চাকা খুলে পড়ে গেল তা খতিয়ে দেখা হবে। বিমানের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা বিষয়ক প্রটোকল ঠিকমতো অনুসরণ করা হয়েছিল কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখবে তদন্ত দল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানের উড্ডয়নের সময় চাকা খুলে যাওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক ঘটনা। এটি বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারত। তবে পাইলটের বিচক্ষণতা ও দক্ষতার কারণেই বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হয়েছে।
এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে না ঘটে, সে জন্য আরও কঠোর নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে। শাহজালাল বিমানবন্দরে এর আগেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কয়েকটি জরুরি অবতরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে চাকা খুলে পড়ার মতো ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে প্রথম বলেই মনে করা হচ্ছে।
এই ঘটনাটি আবারও মনে করিয়ে দিল যে, আকাশপথে যাত্রী পরিবহন একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও সতর্কতার দাবি রাখে। তাই বিমান চলাচলে প্রতিটি যন্ত্রাংশের নিরবিচারে রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রাক-উড্ডয়ন পরীক্ষার গুরুত্ব এখন আরও বেড়ে গেছে।