বাবা বিয়ে করেছে ২টি, মৃত্যুর পর ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সে লাশ রেখে সম্পত্তি ভাগ করছে

0
রাজধানীর একটি অভিজাত এলাকায় ঘটেছে এক অদ্ভুত পারিবারিক নাটক। জানা গেছে, এলাকার পরিচিত ব্যবসায়ী হাসান আলী (৬৫) হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। তার মৃত্যুতে পরিবারের দুই স্ত্রী এবং সন্তানদের মধ্যে শোকের চেয়ে যেন শুরু হয় সম্পত্তি নিয়ে যুদ্ধ।

হাসান আলীর প্রথম বিয়ে হয়েছিল আজ থেকে ৪০ বছর আগে। সেই সংসারে রয়েছে দুই ছেলে এবং এক মেয়ে। পরে দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি, যেখানে রয়েছে এক ছেলে ও এক মেয়ে। দুই সংসারের সম্পর্ক বরাবরই ঠাণ্ডা এবং দূরত্বপূর্ণ ছিল। হাসান আলীর মৃত্যু যেন সেই চাপা আগুনে ঘি ঢেলে দেয়।

হাসান আলীর মরদেহ যখন ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সে রাখা হয়, তখন পরিবারের সদস্যরা শেষকৃত্যের আয়োজনের বদলে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সম্পত্তির হিসাব-নিকাশে। জানা যায়, প্রায় ২০ কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে তার নামে, যার মধ্যে রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট, জমি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংক হিসাব।

দুই পরিবারের মধ্যে শুরু হয় উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডা। বড় ছেলের অভিযোগ, দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার সন্তানেরা কোনোভাবেই এই সম্পত্তিতে ভাগ পাবে না, কারণ বিয়েটি নাকি বৈধ নয়। অন্যদিকে, ছোট পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সব কিছু আইন মেনেই হয়েছে এবং তারাও সমান ভাগ পাবে।

এদিকে মরদেহ ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সে থাকার সময় পেরিয়ে যায় এক দিন, দুই দিন…। পাড়া-প্রতিবেশীরা শুরুতে শোক জানাতে এলেও পরে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে, “মরদেহ নিয়ে ঝগড়া করছে পরিবার,” “সম্পত্তি ভাগ না হওয়া পর্যন্ত দাফন হবে না,” এমন কথাবার্তা বাতাসে ভেসে বেড়ায়।

শেষমেশ দুই পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় কাউন্সিলর এবং আইনজীবী ডেকে আনা হয়। তারা জানান, মৃতের সম্পত্তি নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া আছে এবং সেটি সময়সাপেক্ষ। মৃতদেহ রেখে ঝগড়া করা অনৈতিক এবং অমানবিক। স্থানীয় মসজিদের ইমামও দুই পরিবারকে ডেকে বলেন, “মৃতের মর্যাদা রক্ষা করা আমাদের ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব।”

অবশেষে, মৃত্যুর তিন দিন পর পারিবারিক চাপে এবং স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে হাসান আলীর দাফন সম্পন্ন হয়। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, এখন শুরু হচ্ছে আসল যুদ্ধ—আইনি লড়াই, যেখানে আদালত ঠিক করবে কে কত পাবে।

এই ঘটনাটি সামাজিকভাবে বেশ আলোচিত হয়েছে। অনেকে বলছেন, “মানুষের জীবনের শেষযাত্রায়ও যদি অর্থের লোভ মুখ্য হয়, তবে পারিবারিক বন্ধন আর কোথায়?” অন্যদিকে কেউ কেউ মন্তব্য করছেন, “এটি আমাদের সমাজের আয়না—সম্পদই এখন সম্পর্কের মূল চালিকা শক্তি।”

এই বিতর্কিত পারিবারিক নাটক মনে করিয়ে দেয়, মৃত্যু আমাদের জীবনের অবধারিত পরিণতি, কিন্তু সেটির মর্যাদা রক্ষা করা আমাদের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব, যা প্রায়শই আমরা সম্পদের লোভে ভুলে যাই।

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top