ভারতবিরোধী বিক্ষোভে পাকিস্তানি হিন্দুরা

0


 পাকিস্তানে সম্প্রতি এক বিরল ঘটনা নজরে এসেছে, যেখানে সেখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা ভারতবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। করাচি, হায়দ্রাবাদ ও থারপারকার অঞ্চলে শতাধিক হিন্দু বিক্ষোভকারীর অংশগ্রহণে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। মূলত কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের সাম্প্রতিক নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতেই এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছিল।


বিক্ষোভকারীরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান তোলে। তারা ভারতের সাম্প্রতিক সীমান্ত নীতি, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল ও সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নিপীড়নের প্রতিবাদ জানায়। পাকিস্তানি হিন্দুদের একটি অংশ মনে করে, ভারত সরকার দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি বিঘ্নিত করছে এবং সংখ্যালঘুদের প্রতি তাদের নীতি শুধু ভারতের ভেতর নয়, পুরো অঞ্চলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।


হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নেতা বলেন, “আমরা পাকিস্তানের নাগরিক, পাকিস্তানের প্রতি আমাদের আনুগত্য আছে। ভারত যা করছে, তা শুধু মুসলিমদের বিরুদ্ধেই নয়, বরং মানবাধিকারেরও লঙ্ঘন।” তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই, ভারত সরকার সংলাপে বসুক এবং কাশ্মীর ইস্যুর শান্তিপূর্ণ সমাধান করুক।”


এই বিক্ষোভ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কারণ সাধারণত পাকিস্তানি হিন্দুরা নিজেদের সংখ্যালঘু হিসেবে বেশ সতর্ক থাকে এবং বড় রাজনৈতিক ইস্যুতে প্রকাশ্যে অংশ নেয় না। তাদের এই অবস্থান স্পষ্ট করছে যে, পাকিস্তানি হিন্দুরা শুধু নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় নয়, জাতীয় পরিচয়কেও সমান গুরুত্ব দেয়।


তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বিক্ষোভ আংশিকভাবে সরকারের প্রভাবিতও হতে পারে। পাকিস্তানে ভারতের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি ও তা আরও উসকে দিতে সংখ্যালঘুদের ব্যবহার করা হয়েছে কিনা, সেই প্রশ্নও উঠছে। পাকিস্তানি হিন্দুদের অনেকে অভ্যন্তরীণভাবে ভারতকে পছন্দ করে, কারণ ভারতকে তারা হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে দেখে। কিন্তু প্রকাশ্যে সরকারের সমালোচনা করা বা ভারতের পক্ষে কথা বলাটা পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের জন্য সহজ নয়।


বিক্ষোভের ছবি ও ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাকিস্তানি হিন্দুদের এই অবস্থান ভারতের নীতিনির্ধারকদের জন্যও এক ধরনের বার্তা। এটি বুঝিয়ে দিচ্ছে যে পাকিস্তানের অভ্যন্তরেও ভারতবিরোধী মনোভাব শুধু মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।


শেষ পর্যন্ত এই বিক্ষোভের রাজনৈতিক প্রভাব কতটা গভীর হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এটা স্পষ্ট, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের জটিল খেলায় নতুন এক মাত্রা যোগ হয়েছে, যেখানে পাকিস্তানি হিন্দুরাও নিজস্ব অবস্থান থেকে মুখ তুলেছে।

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top