বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান বলেছেন, “রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ” কথাটির আড়ালে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে। সোমবার (১২ মে) ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। তার বক্তব্যে মূলত আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অবস্থান, আত্মপ্রতিকৃতি বদলের প্রয়াস ও তার পেছনের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
ফজলুর রহমান বলেন, “দেশবাসীকে নতুন নামে ধোঁকা দিতে চায় আওয়ামী লীগ। 'রিফাইন্ড' বা পরিশীলিত শব্দটা শুনে যেন মনে না হয় তাদের আগের কর্মকাণ্ড ভুলে যেতে হবে।” তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ এখন গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার হরণকারী একটি প্রতিকী শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের নামে সামান্য পরিবর্তন এনে মূল চরিত্র পাল্টানো সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় ফজলুর রহমান আওয়ামী লীগের গত এক যুগের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন, যার মধ্যে রয়েছে “ভুয়া নির্বাচন”, “গণতন্ত্র হরণ”, “মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ” ও “বিরোধীদল দমন।” তিনি বলেন, “যদি সত্যিকার অর্থে পরিবর্তন আনতে চায়, তাহলে আগে পদত্যাগ করতে হবে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে এবং জনগণের রায়কে শ্রদ্ধা করতে হবে।”
বিএনপি নেতা এ কথাও বলেন, “দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, বিচারব্যবস্থা রাজনৈতিক প্রভাবাধীন, প্রশাসন দলীয়করণে সম্পূর্ণ রূপে আক্রান্ত। এই বাস্তবতায় ‘রিফাইন্ড’ নামে নিজেদের সাজালেও মানুষ ভুলবে না, অতীতের দুঃশাসনের স্মৃতি এখনো তাজা।”
ফজলুর রহমান দাবি করেন, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ আসলে একটি প্রচারণামূলক ফাঁদ, যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিজের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে, কিন্তু বাস্তব পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত নেই। তিনি বলেন, “শুধু নাম বা শব্দ পাল্টালেই জনগণের আস্থা ফেরানো যাবে না। জনগণ এখন রাজনৈতিক চেতনায় অনেক বেশি সচেতন।”
তিনি আরও বলেন, বিএনপি সবসময়ই একটি গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ ও নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তনে বিশ্বাসী। তবে সেটি হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটি একমাত্র সম্ভব হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনে সম্মত হলে।
সংবাদ সম্মেলনের শেষদিকে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা পরিবর্তন চাই, কিন্তু সেটা লোক দেখানো নয়, বাস্তব ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।”
ফজলুর রহমানের বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে বলছেন, আওয়ামী লীগের ‘রিফাইন্ড’ তকমা আসলে রাজনৈতিক কৌশল মাত্র। অন্যদিকে, বিএনপি এটি জনগণের চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা হিসেবে দেখছে। এখন দেখার বিষয়, এই বিতর্ক আগামী জাতীয় রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলে।