বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের আলোচনা শুরু হয়েছে, কারণ সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ এবং আদালতের কিছু পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে গুঞ্জন উঠেছে যে আওয়ামী লীগ (আ.লীগ) এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। বিশেষ করে কিছু মানবাধিকার সংস্থা, নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা অভিযোগ করে আসছেন যে, ক্ষমতাসীন দল ও তার অঙ্গসংগঠনগুলো নিয়মিতভাবে আইন লঙ্ঘন, রাজনৈতিক সন্ত্রাস, প্রশাসনকে ব্যবহার করে প্রতিদ্বন্দ্বীদের দমন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা রোধ করছে।
সাম্প্রতিক এক আদালতের রায়ে বিচারপতিরা উল্লেখ করেছেন, কোনো রাজনৈতিক দল যদি সংবিধান বা নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন করে, রাষ্ট্র ও জনগণের ক্ষতি করে, তাহলে সেই দলের নিবন্ধন বাতিল করা বা নিষিদ্ধ করার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের রয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে জানানো হয়েছে, তারা বিষয়টি নিয়ে আইন ও সংবিধান পর্যালোচনা করছেন এবং প্রয়োজন হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অবশ্য এই ধরনের আলোচনা বা গুজবকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “আওয়ামী লীগ এদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া দল। আমাদের কোনো কর্মকাণ্ড সংবিধানবিরোধী নয়। বিরোধীরা জনসমর্থন না পেয়ে এখন ষড়যন্ত্রের পথে হাঁটছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত, এবং আইন মেনে চলছি।”
এদিকে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো বলছে, শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ নয়, তাদের অঙ্গসংগঠনগুলোকেও নিষিদ্ধ করা দরকার। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস, নির্বাচনী সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ বহুদিনের। বিরোধী নেতারা মনে করছেন, শুধু মূল দলকে লক্ষ্য করে পদক্ষেপ নিলে চলবে না, তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোকেও আইনের আওতায় আনতে হবে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোও বলছে, রাজনীতিতে সহিংসতা এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার সংস্কৃতি থেকে বের হতে হলে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো দল বা সংগঠন নিষিদ্ধ করা খুবই স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত, যা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় বড় প্রভাব ফেলতে পারে। অনেকেই মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে সংকটের সমাধান হওয়া উচিত, নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নয়।
এখনো পর্যন্ত সরকার বা নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি, তবে বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি ও গণমাধ্যমে তুমুল আলোচনা চলছে। আগামী কয়েক সপ্তাহে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সেটির দিকে সারা দেশের মানুষ নজর রাখছে। কারণ এ ধরনের সিদ্ধান্ত দেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় রচনা করতে পারে।