মারা গেছেন ৫ রাজাকারকে কুপিয়ে হত্যা করা মুক্তিযোদ্ধা সখিনা

0

 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনন্য সাহসী নাম সখিনা খাতুন। সেই ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে তিনি একাই কুপিয়ে হত্যা করেছিলেন ৫ রাজাকারকে। তার সেই বীরত্বগাথা স্থান পেয়েছিল লোককথায়, মানুষের মুখে মুখে এবং বহু মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক লেখালেখিতে। তবে শোকের খবর হলো, এই সাহসিনী সখিনা আজ চলে গেলেন না ফেরার দেশে।


সখিনা খাতুনের বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শুক্রবার ভোর রাতে, নিজের গ্রামের বাড়িতে। মৃত্যুকালে তিনি তিন ছেলে, দুই মেয়ে এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।


সখিনা খাতুনের জীবনের গল্পটা যেন সিনেমার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। ১৯৭১ সালে তাঁর স্বামী এবং পরিবারের একাধিক সদস্যকে রাজাকারদের হাতে হারান তিনি। দুঃখ আর ক্ষোভ বুকে চেপে, এক ফাঁকে দা হাতে নিয়ে একাই রাজাকারদের আক্রমণ করেন। আশপাশের লোকজনের ভাষ্য, তিনি একরাতেই পাঁচজন রাজাকারকে কুপিয়ে হত্যা করেন। সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই পাক হানাদার এবং রাজাকার বাহিনীর মধ্যে ভয় ছড়িয়ে পড়ে।


যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেও সখিনা কখনো বীরত্বের দাম দাবি করেননি। এক মুঠো সম্মান, স্বাভাবিক জীবনযাপন আর দেশের মঙ্গলই ছিল তাঁর একমাত্র চাওয়া। দুঃখের বিষয়, জীবনের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত তিনি সরকারি কোনো স্বীকৃতি বা পর্যাপ্ত সহায়তা পাননি। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং কিছু তরুণ প্রজন্ম মাঝে মাঝে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে বটে, কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে যে সন্মান তিনি প্রাপ্য ছিলেন, তা কখনোই পুরোপুরি পাননি।


তার মৃত্যুতে এলাকাবাসী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। অনেকে বলছেন, রাষ্ট্রের উচিত ছিল জীবদ্দশায় তাঁর যথাযথ স্বীকৃতি ও সন্মান নিশ্চিত করা। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁর বীরত্বগাথা নতুন প্রজন্মকে জানানোর জন্য একটি স্মৃতিফলক স্থাপন এবং তাঁর নামে একটি সড়কের নামকরণের প্রস্তাব করা হবে।


মুক্তিযোদ্ধা সখিনা খাতুনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে শুক্রবার বিকেলে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে। জানাজায় হাজারো মানুষ অংশ নেয়, চোখের জলে বিদায় জানায় তাঁদের প্রিয় সাহসিনীকে।


দেশ স্বাধীন করার লড়াইয়ে জীবনের সবটুকু ত্যাগ করে যাওয়া এই অদম্য নারী আজ আর নেই, কিন্তু ইতিহাসের পাতায় এবং মানুষের হৃদয়ে তিনি চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করেছে পুরো জাতি।

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top